রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ - আ্যনাবেল পুতুল রহস্য (by Piyali Saha Singh)
- SineMeCinema
- Jun 26, 2021
- 5 min read
Updated: Jun 28, 2021
আমরা অনেকেই ভূতের সিনেমা দেখতে ভয় পাই ঠিকই তবে এটা বললে ভুল হবে না যে সবার মনে একটু হলেও কৌতুহল থেকেই যায়। সে অর্ধেক চোখ বন্ধ করে হোক আর অনেকজন মিলে একসাথে বসেই হোক কিছু ভূতের সিনেমা দেখা হয়েই যায়। আর সব থেকে বেশি গায়ে কাঁটা দেয় যখন সেই সিনেমা সত্যিকারের ঘটনা অবলম্বনে তৈরি হয়। আজকে এমনই এক সিনেমা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যেটা সত্যি ঘটনা অবলম্বনে তৈরি। তাহলে রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজের প্রথম আলচ্য বিষয় শুরু করা যাক।
অ্যানাবেল পুতুল। নামটা প্রায় সবার জানা। একে নিয়ে তিনটে সিনেমা তৈরি হয়েছে।
অ্যানাবেল (২০১৪)
অ্যানাবেল ক্রিয়েশন (২০১৭)
অ্যানাবেল কামস হোম (২০১৯)
সিনেমাগুলো বিখ্যাত প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটর এড এবং লরেইন ওয়ারেন্সের জীবনের একটি কেসের পরিপ্রেক্ষিতে বানানো। যদিও সিনেমাটি সত্য ঘটনার অবলম্বনে তৈরি তবে এতে অনেক বাড়তি বানানো অংশ যোগ করা হয়েছে দর্শকের মনোরঞ্জনের জন্য। এমনকি পুতুলটির আসল চেহারা পরিবর্তন করে আরও ভীতিকর করা হয়েছে। নিজের ব্যক্তিগত মতামত যদি দিই তবে বলব সিনেমাগুলো আমার মনসংযোগ খুব একটা ধরে রাখতে পারেনি। মোটামুটি লেগেছে। বরং সিনেমাগুলোর পেছনে যে সত্যি ঘটনাগুলো রয়েছে সেগুলো নিয়ে আমার আগ্রহ বেশি আর আজকে সেটা নিয়েই আলোচনা করব এবং কিছু প্রশ্ন-উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব। যেমন -
-পুতুলটির নাম অ্যানাবেল কিভাবে হল?
-পুতুলটি প্রথম কোথায় পাওয়া যায়?
-পুতুলটি আসলে কার্সড কিনা?
-এটি বর্তমানে এখন কোথায় আছে? ইত্যাদি।
যারা এখনও সিনেমাগুলো দেখেননি তাদেরকে মিডিয়াম স্পয়লার অ্যালার্ট দেওয়া হল।
'অ্যানাবেল' হল এড এবং লরেইন ওয়ারেন্সের ২৬৩ নাম্বার কেস। সময়টা হল ১৯৭০ সাল। ডনা নামে একটি মেয়ের ২৮ তম জন্মদিনে তার মা তাকে একটি পুতুল উপহার দিল। পুরনো সুন্দর একটা অ্যান্টিক পুতুল। ডনা পুতুলটাকে এতটাই ভালবাসত যে সব সময় সেটাকে বিছানায় পাশে নিয়ে ঘুমাতো। ডনা নার্সিং এর স্টুডেন্ট ছিল। সে তার রুমমেট অ্যাঞ্জির সাথে একটা বাড়ি ভাড়া করে থাকত। এরপর কিছুদিন বাদেই তারা অদ্ভুত ঘটনা লক্ষ্য করতে শুরু করল। পুতুলটির হাত-পার পজিশন পরিবর্তন হয় অর্থাৎ কখনো একটা হাতের ওপর আরেকটা হাত থাকে বা পুতুলের পা একেকবার একেকদিকে থাকে। একদিন তো এমন হল ডনা পুতুলটিকে তার বেডরুমে বিছানায় রেখে ক্লাস করতে গেল অথচ এসে দেখল সেটা ড্রয়িংরুমের সোফায় বসা। এছাড়াও কখনো কখনো 'Help us' or ’help Lou' লেখা কাগজের টুকরো খুঁজে পাওয়া যেত ঘরে। লু (Lou) ছিল ডনার বন্ধু। হাতের লেখাগুলো দেখে মনে হত ছোট কোন বাচ্চার হাতের লেখা। এমন লেখা মাঝে মাঝেই ডনা খুঁজে পেত অথচ ওরা ছাড়া বাড়িতে আর কেউই আসত না। এমনই একদিন ডনা বাড়ি ফিরে দেখল পুতুলটা এবারও তার সঠিক জায়গায় নেই। তার চেয়েও ভয়ংকর ব্যাপার হল এবার পুতুলের গায়ে রক্ত লেগেছিল, দেখে মনে হচ্ছিল পুতুলের শরীরের ভেতর থেকেই রক্ত বের হচ্ছে। ডনা প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেল। বুঝতে বাকি থাকল না যে এটা কোন অদৃশ্য শক্তির ঘটনা। আর দেরি না করে তারা একজন এক্সপার্টকে ডাকল এবং সেই আত্মার সাথে কথা বলার জন্য ব্যবস্থা করল। এবং এই প্রক্রিয়ায় ওরা জানতে পারল অ্যানাবেল হিগিন্স নামে এক ৭ বছরের বাচ্চার কথা। বর্তমানে ডনা যেই অ্যাপার্টমেন্টে রয়েছে অ্যানাবেল হিগিন্স সেটা তৈরির অনেক আগে এই প্রপার্টিতেই থাকত এবং একদিন কোন অজ্ঞাত কারণে তার নিথর দেহ সকলে এই জায়গায় খুঁজে পেয়েছিল। তারা আরও জানতে পারল যেদিন ডনার মা তাকে এই পুতুল উপহার দিয়েছিল সম্ভবত সেই বাচ্চার আত্মা এই পুতুলের সাথে জুড়ে গিয়েছিল। এখন সেই আত্মা শুধু এইটুকু চায় তাকে যেন এই পুতুলের মধ্যে থাকতে দিয়ে ডনাদের সাথে একসাথে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। সে শুধু ভালবাসা চায় এর থেকে বেশি সে আর কিচ্ছু চায়না। এমনকি ডনাকে মানসিক ভাবে ম্যানউপুলেট করে কোন ভাবে সে সেই অনুমতি আদায় করেও নেয়। এরপর শুরু হয় আসল খেলা।
লু কখনো পুতুলটিকে পছন্দ করত না। সে ডনাকে বলত অ্যানাবেলের আত্মাকে পুতুলটির মধ্যে থাকার অনুমতি দিয়ে সে খুব ভুল করেছে। লু এসব বলে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে এনেছিল। একদিন রাতে সে স্বপ্ন দেখল তার পায়ের কাছে পুতুলটা বসে আছে। হঠাৎ সেটি আস্তে আস্তে তার বুকের ওপর উঠতে লাগল। লু রীতিমতো ভয়ে চমকে উঠে পড়েছিল।
এর কিছুদিন পর একদিন ডনা ও লু বাড়িতে এসে দেখল ডনার রুমে আওয়াজ হচ্ছে তারা ভাবল কেউ ঘরে ঢুকেছে কিন্তু ঘরে এসে পুতুল ছাড়া আর কাউকে দেখতে পেল না। লু পুতুলটার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করতে গেলেই তার বুকে ৭ টা খামচির দাগ ফুটে উঠল। দাগগুলো ছিল কোন বাচ্চার হাতের এবং এতটাই গভীর ছিল যে তার শার্ট রক্তে ভিজে গিয়েছিল।
ডনার বুঝতে বাকি রইল না যে এই আত্মা শয়তানের রুপ বই কিছুনা। এরপর তারা চার্চে যোগাযোগ করায় ফাদার কুক এড ও লরেইন ওয়ারেন্সেদের এই কেসের কথা জানাল।
ওয়ারেন্সেরা এসে তাদের কাছ থেকে সব শুনে জানাল যে কোন আত্মা কখনও কোন পুতুল বা জিনিসকে পোসেসড করেনা, করে মানুষকে। অর্থাৎ অ্যানাবেলের আত্মা ডনাকে মিথ্যে কথায় ফাঁসিয়ে এই পুতুলের মধ্যে থেকে গেছে ঠিকই কিন্তু তার আসল উদ্দেশ্য ডনার আত্মা নেওয়া, ডনার মধ্যে প্রবেশ করার।
ডনা রীতিমতো ভয় পেয়ে গেল। সে ওয়ারেন্সেদের বলল পুতুলটাকে নষ্ট করে ফেলতে। কিন্তু এড জানাল কোন পোসেসড জিনিস নষ্ট করে কোন লাভ হয়না। সেই আত্মা আবার অন্য জিনিসের আশ্রয় নেবে তার চেয়ে বরং তাকে কোথাও আটকে রাখলে বেশি নিরাপদ। অনেকটা ঠিক জিনকে বোতলে আটকে রাখার মত। আর তাই তারা সেই পুতুলকে নিয়ে তাদের 'ওয়ারেন্স অকাল্ট মিউজিয়াম ' এ রাখবে ঠিক করল। আর বর্তমানেও পুতুলটি সেই মিউজিয়ামেই আছে। যাদের দেখার ইচ্ছে গিয়ে দেখে আসতে পারেন।
পুতুলটি কি সত্যি কার্সড ছিল?
- আমার মতে ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটা উদাহরণ দিই।
*পুতুলটিকে যখন ওয়ারেন্সরা তাদের ব্যাক্তিগত মিউজিয়ামে নিয়ে আসল তখন তারা ঠিক করল একে হোলি ওয়াটার দিয়ে পিউরিফাই করবে তাই একজন ফাদারকে ডাকা হল। ফাদার এসে কথায় কথায় পুতুলটার উদ্দেশ্যে বলল যে ভগবানের থেকে বড় কেউ নেই, তুমিও না৷ এড সাথে সাথে ফাদারকে এমনটা বলতে না করল। সে বলল হ্যাঁ ভগবানের থেকে বড় কেউ না তবে মানুষের থেকে শক্তিশালী। এরপর ফাদার যখন তার গাড়ি করে বাড়ি ফিরছিলেন তার গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট হয়। খুব গুরুতর ভাবে জখম হন। জ্ঞান ফেরার পর তিনি বলেন অ্যাক্সিডেন্টের ঠিক আগের মুহুর্তে সে তার গাড়ির আয়নায় অ্যানাবেল পুতুলের রিফ্লেকশন দেখেছিলেন।
*ওয়ারেন্সের অকাল্ট মিউজিয়ামে অ্যানাবেলের মত আরও অনেক কার্সড জিনিস ছিল যেগুলো তারা কোন না কোন কেস মারফত এনে মিউজিয়ামে রাখত। অন্য কার্সড জিনিসগুলো মিউজিয়ামের ভেতর এমনিই পরপর সাজিয়ে রাখা হত কিন্তু অ্যানাবেল পুতুলকে বাকিদের মত খোলামেলা রাখা যায়নি। তাকে মিউজিয়ামের ভেতর আরও একটা কাঁচের বাক্সে সাজিয়ে রাখতে হয়েছিল। আর সামনে খুব স্ট্রিকলি লিখে দেওয়া আছে এটাকে ভুলেও যেন কেউ না খোলে। কারন অ্যানাবেলের এতটাই ইভিল শক্তি ছিল যে তার আশেপাশের বাকি কার্সড জিনিস গুলোকে ম্যানিউপুলেট করে তাদের শক্তি জাগিয়ে তুলতে পারত। যেমন যেদিন প্রথম পুতুলটিকে মিউজিয়ামে প্রবেশ করানো হয় সাথে সাথে সেখানে রাখা বাকি জিনিসগুলো একা একাই নড়াচড়া করা শুরু করে দিয়েছিল। তাই তাকে বাধ্য হয়ে কাঁচের আলাদা বাক্সে রাখা হয়েছিল। এটা এড নিজেই একটা ইন্টারভিউয়ে বলেছিলেন।
*একদিন সেই মিউজিয়ামে একজন ছেলে তার প্রেমিকাকে নিয়ে ঘুরতে যায়। সে পুতুলটার ব্যাপারে বিশ্বাসী ছিল না। পুতুলটাকে একটা কাঁচের বাক্সের মধ্যে রাখা ছিল। ছেলেটা সেই কাঁচের মধ্যে আঙুল দিয়ে কয়েকবার টোকা মেরে তাকে চ্যালেঞ্জ করে ছিল - আমি তোমাকে বিশ্বাস করিনা ক্ষমতা থাকলে আমাকে এখুনি কিছু করে দেখাও। তাকে বার বার না করা সত্ত্বেও সে এমনটা করে গেল। যাইহোক তারা যখন তাদের বাইক নিয়ে বাড়ি ফিরছিল তাদেরও অ্যাক্সিডেন্ট হয় এবং ছেলেটা মারাও যায়। তার প্রেমিকার মুখে শোনা যায় যে সে গাড়ি চালানোর সময় বারবার সেই পুতুল নিয়ে মজা করছিল।
*একবার এক ডিটেকটিভ এসেছিল সেই মিউজিয়ামে কোন দরকারে। সে সেই পুতুলের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। সে এডকে বলছিল যে সে সেই পুতুলের দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছেনা। শোনা যায় পুতুলের মধ্যে সে এমন কিছু দেখেছিল যে তারপর থেকে সে একদম চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। এমনকি সে তিনমাস পর চাকরি ছেড়ে দিয়ে সেই শহর থেকেই চলে যায়। এড তাকে জিজ্ঞেস করেছিল কিন্তু সে আসলে কি দেখেছিল কাউকে বলেনি।
*লরেন্সরা বলত এই পুতুলকে কখনও ছুঁতে না ও তার দিকে সোজাসুজি তাকাতে না। লরেইনের একটা ইন্টারভিউয়ে দেখলাম সত্যি সত্যি সে ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় পুতুলটির দিকে তাকাচ্ছে না। সত্যি আশ্চর্যের! আমি এই পোস্টের জন্য ভিডিও ঘাটতে গিয়ে দেখি কমেন্ট সেকশনে অনেকেই এই পুতুলকে দেখে ফেলার জন্য ক্ষমা চেয়ে কমেন্ট করেছে। একে যে মানুষ এখনো ভয় পায় সেটা সত্যি বোঝা যায়।
এবার বলুন আপনাদের কি মনে হয় পুতুলটির কি সত্যি আশ্চর্য ক্ষমতা রয়েছে?? পুতুলটিকে নিজের চোখে দেখার ইচ্চে আছে কারও?? থাকলে নিচে কমেন্টে জানান আমি ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি😊😊😊
আমার পোস্টের সোর্সগুলো-
Interview of Ed Warren- https://youtu.be/5uPJAXO0ভজস
Interview of Lorraine -https://youtu.be/4OdDctr0Mp0
Official Website of Warrens- warrens.net
Youtube
Wikipedia
Address of Warren Occult Museum - The Warren's Occult Museum
30 Knollwood St, Monroe, CT 06468, United States
Comments