
Movie explosion - Churuli
- SineMeCinema
- Dec 1, 2021
- 4 min read
Streaming on Sony Liv
লিজো জোস পেল্লিসেরীর নতুন সিনেমা চুরুলী একাধিকভাবে interpret করা যায়। আমি একরকম interpretation রাখার চেষ্টা করছি। আপনাদের মতামত আমার থেকে ভিন্ন হতে পারে।
পরিচালক বলেছেন, তার আরো দুটি ছবি 'Ee Ma Yau' আর 'Jallikattu' এবং 'Churuli' কে একটা ট্রিলজি বলা যায়। কারণ এই তিনটে সিনেমা তার মতে "Life, Death and Afterlife' কে তুলে ধরে।
'Churuli' আসলে বিনয় থমাসের একটি ছোটগল্পের চিত্রায়ণ যেখানে পরিচালক মহাশয়েরও অনেক সংযোজন আছে। Churuli means Spiral. কেরালায় এই নামের একটি গ্রাম সত্যিই আছে।
'Churuli' শুরু হয় একটা লোককাহিনী দিয়ে। আমরা জানতে পারি এক জঙ্গলে একটা পেরুমাদন ( Evil Spirit) আছে যে নানান রূপ ধরে পথচারীদের দিকভ্রান্ত করে। এতে ঐ পথ দিয়ে কেউ যেতে পারে না। এমন সময় একজন নাম্বুথিরি (monk) ঠিক করে যে এই পেরুমাদনকে সে বন্দী করবে যাতে গ্রামের লোকজনের কোনো অসুবিধা না হয়। সে ভাবে সে সহজেই সেই দুষ্ট আত্মাকে ধরে ফেলতে পারবে। কিন্তু জঙ্গলে সে নিজেই সেই পেরুমাদনের জালে পা দিয়ে দিকভ্রান্ত হয় আর একটা চিরন্তন লুপে ঘুরতে থাকে জঙ্গলের ভেতর।
সিনেমা শুরু হয় দুজন পুলিশ অফিসারকে দিয়ে। আমরা বুঝতে পারি যে যেই লোককাহিনী আমরা শুনলাম তার কোনো না কোনো তাৎপর্য এখানে আছে। সেটা কেমনভাবে তাই দেখতে বসা। এক্ষেত্রে Tumbbad এর কথা মনে পড়তে পারে। সেই পুলিশ দুজনও এক অপরাধীকেই ধরতে যাচ্ছে। অপরাধী অর্থাৎ সমাজের চোখে পেরুমাদন।
পুলিশ অফিসার কেন? আমার মনে হয় এক্ষেত্রে পরিচালক একটা power dynamics আর power shifting এর কথা বলতে চেয়েছেন। সমাজে যেমন সাধু একটা উচ্চবর্গের প্রতিনিধি মনে করা হত। সে কিন্তু ঐ জঙ্গলে আসার পর থেকে সেই দুষ্ট আত্মা বা যে সমাজের চোখে নিম্ন তার অধীনে চলে আসে। তখন সে তাকে চালনা করে। অর্থাৎ সমাজে যা power dynamics ছিল তা জঙ্গলে shift হয়। একইভাবে পুলিশ বর্তমান সমাজে একটা শক্তিশালী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। তার ক্ষমতা পরিবর্তন ঘটে চুরুলি গ্রামে এসে। আবার Power shift হয়। ঐ গ্রামে সকলে অপরাধী অর্থাৎ সমাজের চোখে নিম্ন। কিন্তু আমরা দেখতে পাই যে তারাই সেখানে পুলিশদের পরিচালনা করছে।
পুলিশ দুজন সাজীবন আর অ্যান্টনি। এটা তাদের আসল নাম নয় আমরা জানতে পারি। তারা চুরুলি গ্রামে যায় সেই অপরাধীকে ধরতে। পথে জীপে করে যাওয়ার সময় তাদের একটা কাঠের ভঙ্গুর পুল পেরতে হয়। এই ব্রীজ পেরনোর অনেক তাৎপর্য হতে পারে।
এক, যদি এটি সত্যিই পরলোক নিয়ে হয় পরিচালকের মত অনুযায়ী তাহলে সেই ব্রীজ ইহলোক থেকে পরলোকে যাবার পথ। এখানে আমরা ক্যাথলিক মাইথোলজীরও কিছু ছোঁয়া দেখি।
দুই, সেই ব্রীজ সভ্য সমাজ থেকে এমন এক পৃথিবীতে নিয়ে যায় যেখানে অপরাধ সর্বত্র। কোনো নিয়ম নেই। সবাই উদ্ধত, অসভ্য, অশ্রাব্য তাদের ভাষা। যেন এক দানবীয় পৃথিবী। এক্ষেত্রে জীপচালকের ব্যবহারেরও এক অদ্ভুত পরিবর্তন আমরা দেখতে পাই।
সাথে আমরা এক ব্যক্তির কথায় এলিয়ানের উল্লেখ পাই। হয়ত পরিচালক দেখাতে চেয়েছেন যদি পরলোক বা অন্য পৃথিবী থাকে তাহলে সেটা এলিয়ান কন্ট্রোল করবে। এই পৃথিবীর সমস্ত মানুষ এক সুতোয় বাধা আর এই এলিয়ানরাই তাদের চালনা করছে। তাদের রাতের গভীরে দেখা যায়। এখানে এলিয়েনদেরও পেরুমাদনের সাথে তুলনা করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। যা কিছু আমরা জানি না, তা আমাদের ভয়ের কারণ বা Evil Spirit. এলিয়েনদের ক্ষেত্রেও আমাদের কাছে বিশেষ তথ্য নেই তাই এখানে সমাজের চোখে তারা পেরুমাদন। প্রেতের মতোই তাদের রাতের অন্ধকারে দেখা যায়।
এবার এই দুজন পুলিশ সেই পৃথিবীতে আসার পর সাজীবন সহজেই সেখানে মিশে যায়। অ্যান্টনিকে একটু বেগ পেতে হয়। আবার সাজীবনের জায়গাটা ভীষণ পরিচিত লাগে। গ্রামবাসীদের কথায় জানা যায় তার সাজীবনকে আগে দেখেছে। রাতের অন্ধকারেও সাজীবন জঙ্গলে পথ খুঁজে পায় অনায়াসে। একসময় সাজীবনের মধ্যে দ্বৈত ব্যাক্তিত্বের প্রকাশ আমরা পাই। এর কারণ সাজীবন এর আগের লুপে এইখানে এসেছে। তাই সে এমন কিছু অনুভব করে বা দেখতে পায় যা অ্যান্টনি পায় না।
এবার সিনেমার ক্লাইম্যাক্সে আমরা দেখি গ্রামবাসীরা জানতে পেরে যায় অ্যান্টনি আর সাজীবনের আসল পরিচয়। কিন্তু বাস্তবে তারা সব সময়ই সেটা জানত। তারা জানে এই চক্র সম্বন্ধে আর এটাও যে সাজীবন কে। কিন্তু তারা না বোঝার ভান কে এই লুপ চলতে থাকার জন্য বা এলিয়েনরা তাদের ঐভাবেই পরিচালিত করে। একমাত্র গ্রামের বাইরে থাকা মালিশওয়ালিই তাদের মুখের ওপর বলে যে সে তাদের আসল পরিচয় জানে। হয়ত সে ঐ গ্রামের উপকন্ঠে থাকার জন্য আর এলিয়েনদের অধীনে নেই। হয়ত তার সাধনার বলে এমন কোনো শক্তি আছে যার জন্য সে তাদের অধীন থেকে বেরিয়ে গ্রামের উপকন্ঠে থাকে।
অবশেষে অ্যান্টনি আর সাজীবন সেই অপরাধী জো এর সামনে আসে যাকে ধরতে সে এসেছিল। জো কে নিয়ে যাওয়ার আগে তারা গ্রামবাসীদের অদ্ভুত আচরণ লক্ষ্য করে। গ্রামবাসীরা বলে যে পুলিশরা ওখান থেকে বেরতে পারবে না। জো তাদের বলে যে তাকে নিয়ে যেতে দিতে। আমরা জো আর সেই দোকানদারকে এক অন্য না বলা ভাষায় কথোপকথন করতে দেখি। তারা চোখ স্লো মোশনে চোখের পাতা ফেলে বার্তা বিনিময় করে। সকলেই জানে জো পেরুমাদন। জো হয়ত তার আসল নামও নয়। যেটা সাজীবন বলে যে এই গ্রামে কেউ তাদের আসল পরিচয়ে নেই। সকলে গা ঢাকা দেওয়ার জন্য আছে। অর্থাৎ ছদ্মবেশে। যেমন ভাবে পেরুমাদন অ্যান্টিটরের ছদ্মবেশে ঐ ঋষিকে দিকভ্রান্ত করেছিল।
জো অ্যান্টনি আর সাজীবনের সাথে করে বনের রাস্তা ধরে যায়। আমরা বুঝতে পারি প্রথম লোককাহিনীর পুনরাবৃত্তি হবে। জো তাদের দুজনকে দিকভ্রান্ত করে। আমরা টের পাই জো এর super natural কিছু ক্ষমতার কথা যখন সে প্যারালাইসিস মুক্ত হয় নিমিষে। এমনকি তার হাতের বাঁধন খুলে যায়। অ্যান্টনি অবাক হয়। কিছু পরে আমরা বুঝতে পারি সাজীবনও এই পৃথিবীর একজন আর এলিয়েনদের অধীনে। এই লুপে হয়ত তার কাজ ছিল অ্যান্টনিকে ঐ পৃথিবী থেকে এই পৃথিবীতে নিয়ে আসা। যমদ্যুতের মতো। আগের লুপে তাকে নিয়ে আসা হয়েছিল সেক্ষেত্রে জো সেই কাজটি করেছিল। সেই লুপে বাসু বলে একজন অপরাধী ছিল। একটি কথোপকথনে আমরা জানতে পারি বাসুকে গ্রামের এক বৃদ্ধ ধরিয়ে দেয় পুলিশকে। অর্থাৎ এই ঘটনা আগেও ঘটেছে। চিরন্তন ঘটছে।
শেষে আমরা দেখি অ্যান্টনিও এলিয়েনদের দ্বারা hypnotize হয়ে তাদের পৃথিবীতে বিলীন হয়ে যায়। পরের লুপে হয়ত অ্যান্টনি যমদ্যুতের কাজটি করবে।
আর হয়ত পরিচালক এটাই বলতে চেয়েছেন যে মৃত্যুর পর আমরা এক infinite loop এ ঘুরতে থাকি। যদিও লিজো নিজে বলেছেন এই সিনেমা open ending and কোনো definite উত্তর নেই এর। যে যেরকম উত্তর চায় সেরকমভাবেই দেখতে পারে। তিনি এক সারিয়াল পৃথিবী বানাতে চেয়েছেন। যা রিয়েল পৃথিবীর বিপরীত। এমনকি সেখানকার মানুষের পরিচয়ও রিয়েল নয়।
তাই চুরুলির মতো এই ছবির বিবরণও অসীম। এই স্পাইরালের কোনো শেষ নেই। যে যেমনভাবে interpret করবে তেমনই। এটা আমার interpretation. আপনাদের অন্যরকম কিছু মনে হলে বা কিছু যোগ করতে চাইলে অবশ্যই আলোচনা হোক।
©ঈশিতা চক্রবর্তী
Comentarios