top of page

Movie Review- Charachar by Buddhadeb Dashgupta

  • Writer: SineMeCinema
    SineMeCinema
  • Jun 28, 2021
  • 2 min read

Movie - Charachar

Director - Buddhadeb Dashgupta

Platform - Youtube

Review credit - Pajjaul Paul


একটা পাখি মারা গেল নিতাই মারা যাওয়ার তিনদিন আগে। লখার ছেলে নিতাই, তিন বছর বয়স তখন। একদিন ভোরবেলা লখা দেখল নিতাই মরা পাখিটাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে। লখাও গেল ছেলেটার পিছু পিছু। নিতাইয়ের হাতে মরা পাখিটা। কিছুটা গিয়ে মাটিতে গর্ত করে পাখিটা পুঁতে দিল নিতাই। তারপর বাবাকে বলল, এইবার পাখিটা গাছ হয়ে উঠবে, এক গাছ পাখি!

লখা পাখি ধরে। লখা পাখির খোঁজে ঘুরে বেড়ায় বিলের ধারে জঙ্গলে। লখা বুকের ভেওর সমুদ্রের গল্প ভাসে, সমুদ্রে নাকি অনেক পাখি, সমুদ্রের নাকি অদ্ভুত শব্দ। লখা কখনো সমুদ্র দেখেনি, শুধু সমুদ্র দেখেছে এমন মানুষের কাছ থেকে গল্প শুনেছে। লখার বাবার বাবা থেকে শুরু করে আগে পরে বংশে সবাই পাখি ধরে, খাঁচায় রাখে। লখা তারপর পাখি বেচে দেয় শাসমলবাবুর কাছে, সেখান থেকে আবার পাখি চলে আসে কলকাতার পাখিবাজারে, সেখান থেকে ঘরে ঘরে, খাঁচায় খাঁচায়। লখা অবাক হয়ে ভাবে এত বছর ধরে, লখার বাবা, দাদু, লখা সবাই পাখি ধরেই চলেছে, ধরেই চলেছে, তবু পাখি ফুরোয় না কেন। পাখি কী আদৌ এই পৃথিবীর প্রাণী?

পাখিকে সত্যিই এই পৃথিবীর প্রাণী মনে হয় না লখার। সে হাতে ধরে একটার পর একটা পাখি খাঁচা থেকে বের করে উড়িয়ে দেয়। একটাই পাখি তিনবার ধরা দেয়, লখার কাছে, সে তিনবারই উড়িয়ে দেয়। পাখিকে পৃথিবীর প্রাণী মনে হয় না লখার। লখার পৃথিবীতে শাসমলবাবুর কাছ থেকে আগাম টাকা নেওয়া আছে, লখার পৃথিবীতে তার বউ শারি আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে তার থেকে, মোটরবাইক নিয়ে আসছে শাসমলবাবুর আড়তের একজন, শারির বুকের মধ্যে সেই মোটরবাইকের শব্দ বাজছে লখার পাশে শুয়ে। আর শারির পাশে শুয়ে লখা দেখতে পাচ্ছে নিতাই একটা মরা সাদা পাখি পুঁতে দিচ্ছে মাটিতে। পাখির কবরের আশেপাশে শুধু কাঁটাগাছ।

একটা অদ্ভুত দোটানায় পড়ে লখা। একদিকে পাখি, একদিকে খাঁচা। হয় তাকে পাখি ওড়ানো ছাড়তে হবে, নয়তো শারিকে। লখা ঠিক করে সে আর পাখি উড়িয়ে দেবে না। বরং সে শহরে যাবে, অনেক পাখি ধরে নিয়ে যাবে শহরে, সংসারটা গুছিয়ে নেবে আবার।

লখা যখন পাখির খাঁচা কাঁধে ওভার ব্রিজ দিয়ে হেঁটে যায়, শহরের রাস্তা তখন যানজটে থমকে। লখা অবাক হয়ে শহর দেখে। শহরে লোকে খাঁচায় পাখি ধরে বাড়ি নিয়ে যায়। শহরের আড়তদারের কাছে যত পাখি আছে সেসব দিয়ে এক আকাশ ভরে ফেলা যাবে। লখার সংসারটাও ভরে উঠবে।

তারপর ফিরে আসে লখা। কাঁধে পাখির খাঁচা নিয়ে ফিরে আসে লখা। তারপর খাঁচা থেকে সমস্ত পাখি বেরিয়ে আসে লখার একার স্বপ্নে। পাখি ভরে থাকে তার ঘর, জানলা, দাওয়া, ছাদ, আকাশ, অস্তিত্ব সব। লখা সরে আসে খাঁচা থেকে। লখা সরে আসে জঙ্গলে। লখা সরে আসে পাখিদের মধ্যে।

তারপর এক রাতে লখা সমুদ্রে পৌঁছে যায়। নিতাই তার জন্য দিগন্তের একদম কাছে পুঁতে রেখেছে পাখিগাছ। ঘরের দরজা খুললেই সমুদ্র। সমুদ্রে হাজার হাজার পাখি। আকাশে হাজার হাজার পাখি উড়ছে তখন। পাখি এই পৃথিবীর প্রাণী না। লখা এই পৃথিবীর প্রাণী না। লখা স্বপ্নের মধ্যে বাস করা একটা মানুষ। লখা আমাদের মতো ক্রমশ ছোট থেকে আরো ছোট হয়ে আসা খাঁচায় বাস করা মানুষদের আফশোস দিয়ে বানানো একজোড়া সৃষ্টিছাড়া ডানা।

বি.দ্র: এত অসামান্য একটা ছবির ইন্টারনেটে কোনো ভালো রিভিউ নেই দেখে খুব অবাক লাগল। এই মানের সিনেমা বিদেশে তৈরী হলে রজার এবার্ট থেকে শুরু করে ফিল্মসুফি অবধি হাজারটা রিভিউ পাওয়া যেত। আমরা বড্ড আত্মবিস্মৃত জাত।



1 Comment


Koushik Das
Koushik Das
Jun 28, 2021

বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের "উত্তরা" দেখেছি, ভীষণ ভাল লেগেছে.. এই লেখাটা পড়ে এবার চরাচর দেখার অপেক্ষায় থাকলাম..

Like
Post: Blog2_Post

Subscribe Form

Thanks for submitting!

8660898926

  • Facebook
  • Twitter
  • LinkedIn

©2021 by SineMeCinema. Proudly created with Wix.com

bottom of page